যখন এডমিশনের গল্প ফুরায়, তখন শুরু হয় নিঃশব্দ বেদনা
কিছু কিছু রাত্রি আসে, যেসকল রাত্রিতে কিছু না করিয়াও মন প্রশান্ত হয়। কোনও কাজের তাড়া থাকে না, নেই ঘুমের প্রয়োজনও। ভর্তি পরীক্ষার চাপ শেষ (ব্যর্থ),এখন মস্তিষ্কে নেই উচ্চতর গণিতের জটিল সূত্র, নেই পদার্থবিজ্ঞানের অচেনা তত্ত্ব, নেই আর সেই চিরচেনা রাতজাগার ভয়। তবু, এমন এক নিস্তব্ধ রাত্রিতে বুকের গভীরে এক অজানা বেদনা জমিয়া থাকে,যাহা ভাষায় প্রকাশ করা দুঃসাধ্য।
এই সকল রাত্রিতে আমার বড়ো ইচ্ছা জাগে পাখি হই,ডানা মেলিয়া উড়িয়া চলি দূর দেশে, এমন এক স্থানে, যাহাতে কেহ আমাকে চিনিবে না, খোঁজও করিবে না। আবার কখনও মনে হয়, যদি একটি ঝরা পাতা হইতাম,গাছের শাখা হইতে খুলিয়া নীরবে ভূমিতে পড়িয়া যাইতাম, কোনও শব্দ না করিয়া, কারও দৃষ্টিগোচর না হইয়া।
এই নিরালোক রজনীতে হারাইতে ইচ্ছা করে। চুপিচুপি হেঁটে বেড়াইতে ইচ্ছা করে নগরীর কোনো নিঃসঙ্গ গলিতে,নিজেরই ছায়াটির সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলিতে। কখনও ভাবি, যদি কোনও রিকশাচালকের পাশে বসিয়া তাহার জীবনের গল্প শুনিতে পারিতাম,তাহার ক্লান্ত চোখে হয়তো নিজেরই বেদনার প্রতিফলন দেখিতে পাইতাম।
কখনোবা আবার মনে হয়, যদি একটি ক্ষুদ্র ফড়িং হইতাম! উড়িতে উড়িতে চলে যাইতাম জীবনানন্দ দাশের কবিতার পাতায়। তাহার সম্মুখে দাঁড়াইয়া জিজ্ঞাসা করিতাম "মহাশয়, বছর কুড়ি পরে সত্যিই কি কেউ থাকে? থাকিলেও, কি আর পূর্বের ন্যায় থাকে?"
এই রাত্রিগুলিতে আমি যেন আর আমি থাকি না। একপ্রকার নীরব বাতাস হইয়া যাই।যাহা অদৃশ্য, অতি হালকা, অথচ অস্বাভাবিকভাবে ভারী। কারও দৃষ্টিতে ধরা পড়ি না, তবু নিজের অন্তরে এক নিরব ঝড় বয়ে চলে।